নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে পুলিশের সাথে দুই মাদক ব্যবসায়ীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ অভিযুক্ত দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। আটককৃতদের কাছ থেকে এক কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে পুলিশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, মাদক ব্যবসায়ীর সাথে পুলিশের কোনো হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। আটককৃতরা একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক হিসেবে দাবি করেছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আটককৃত দুই মাদক ব্যবসায়ী হলেন- হৃদয় (২৫) হৃদয়ের বাড়ি নওদাপাড়া বাজারে অবস্থিত জনতা ব্যাংকের পিছনে। তার বাবার নাম মো: হারুন। জনি (৩৫)। তার পিতার নাম: আলমগীর। তার বাড়ি বায়া চার চিটের মোড়। তারা একেঅপরের শালা দুলাভাই।

পুলিশের একটি সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোপন সূত্রে পুলিশের কাছে আগে থেকেই খবর ছিল প্রেস লেখা একটি টিভিএস মোটরসাইকেলে গাঁজা বহন করে নিয়ে যাওয়া হবে। তাই গাঁজা বহনকারী মোটরসাইকেল আরোহীকে পাকড়াও করতে পুলিশের প্রস্তুতিও ছিল। সোমবার বেলা আড়াইটার দিকে প্রেস লেখা টিভিএস মোটরসাইকেলে করে দুইজন গাঁজা বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল।

পথে নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকায় তাদের দেখেই পুলিশ থামার সংকেত দেয়। কিন্তু তারা পুলিশের সিগন্যাল অমান্য করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পুলিশও মোটরসাইকেল নিয়ে তাদের পিছু ধাওয়া দিয়ে ধরার চেষ্টা করে। শেষপর্যন্ত নগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর মহিলা পলিটেকনিকের সামনে তাদের আটকাতে সক্ষম হয় পুলিশ। এসময় পুলিশ তল্লাশি করতে চাইলে তারা সাংবাদিক বলে পরিচয় দেয়। এরমধ্যে জনি নিজেকে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক বলে দাবি করেন ও পরিচয়পত্র দেখান। আর হৃদয় সাংবাদিক পরিচয় দিলেও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।

তাদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে পুলিশ জোর করে তল্লাশি করতে চায়। এসময় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে পবা থানার পুলিশের এসআই আকতারের সাথে দুই মাদক ব্যবসায়ীর হাতাহাতি শুরু হয়। পরে আশপাশে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এগিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল আরোহী দুই মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করে।

এ সময় তাদের শরীর তল্লাশি করে এক কেজি গাঁজা উদ্ধার করা । এসময় পথচারী ও স্থানীয় লোকজন পুরো ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেন। পরে তাদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
ঘণ্টাখানেক পরে আটককৃত দুইজনের মধ্যে জনিকে আহতাবস্থায় পুলিশি হেফাজতে রামেক হাসপাতালের ৪২ নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। আর হৃদয়কে থানা হেফাজতে রাখা হয়।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী একটি সূত্র জানায়, আটককৃতদের কাছ থেকে পুলিশ এক কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। কিন্তু পুলিশ দাবি করছে, এক কেজি নয়, তাদের কাছ থেকে ৮০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে। একইসঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীর সাথে পুলিশের হাতাহাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি বলেও দাবি করেছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে রামেক ৪২ ওয়ার্ডে ভর্তি জনির সাথে যোগাযোগ করা হলে জনি সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে এক কেজি গাঁজাসহ আটকের কথা স্বিকার করে। তবে তিনি দাবি করেন, পুলিশ সাদা পোশাকে থাকায় তাদের চিনতে না পেরে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। জনি আরো জানায়, চারঘাট ইউসুপুর এলাকার পাইকারী মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কেজি গাঁজা ক্রয় করে নিয়ে আসছিলেন। তবে তার নাম জানেনা বলে জানান তিনি। এ গাঁজাটি সোহাগ নামের এক ব্যক্তিকে পৌছে দেয়ার কথা ছিলো।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পবা থানার পুলিশের এসআই আকতার দাবি করে বলেন, আমার সাথে তাদের হাতাহাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর তাদের কাছ থেকে এক কেজি নয়, ৮০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

পবা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মুস্তফা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ধাওয়া করে দুইজন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। তবে হাতাহাতির ঘটনা সঠিক নয় বলে দাবি করেন ওসি। এঘটনায় আটককৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার দায়ের করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে তাদের আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।

মতিহার বার্তা ডট কম: ০৬ অক্টোবর ২০২০